বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে আমরা প্রায়ই দেখেছি বা অনুভব করেছি যে, কোনো রাজনৈতিক নেতার ছেলে তার বাবার নাম ব্যবহার করে যা ইচ্ছে তাই কাজ করে চলেছে বা বাবার নামে অনেক ভুল কাজ করেছে। এমন অনেক উদাহরণও আছে যেখানে রাজনীতিবিদদের সন্তানরা বাবার নাম ব্যবহার করে কুকাজ করে। একজন সাধারণ কাউন্সিলরের ছেলেও প্রায়ই তার বাবার নাম ব্যবহার করে যা ইচ্ছে তাই করে। বাবার নামে ভিআইপি মানুষের সুযোগ নেয়।
তবে আজ এমন এক মেয়ের কথা জেনে নেওয়া যাক, যে ভারতের রাষ্ট্রপতির মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মানুষ তাকে জানে না, তাই সে তার পদবী টি লুকিয়ে রাখতেন। তবে অনেক বছর চাকরির পর সবাই জানতে পেরে সে রাষ্ট্রপতির মেয়ে এবং সবাই অবাক। সবাই হতবাক। এটি এমন একটি ঘটনা যা কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি। আসুন জেনে নেওয়া যাক কে সেই রাষ্ট্রপতির মেয়ে এবং তিনি কোথায় কাজ করছেন।
‘জীবন নিজের কাঁধে ভর করে বাঁচতে হয়, অন্যের কাঁধে তো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়।’ এই কথাগুলো এই মেয়েটির ক্ষেত্রে একেবারেই প্রযোজ্য। কারণ তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জীবনে নিজের মতো করে চলবেন এবং বাবার বড় নাম ব্যবহার না করে কাজ চালিয়ে যাবেন। এই মেয়েটি ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের (Ramnath kovind) মেয়ে স্বাতি কোবিন্দ (Savita Kovind)। এয়ার ইন্ডিয়াতে কাজ করেন স্বাতী। এয়ার ইন্ডিয়াও জানত না যে স্বাতী রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের মেয়ে। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো দূরপাল্লার দেশে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং 777 এবং 787 ফ্লাইটে এয়ার হোস্টেস হিসেবে কাজ করেছেন স্বাতী।
কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার একজন কর্মীও এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না। জানতে পেরে তারা খুব খুশি হন। এবং স্বাতীর চিন্তাধারাকে সম্মান দেন। এয়ার ইন্ডিয়াতে কাজ করার সময় তিনি তার পদবীও ব্যবহার করেননি। এটা তার উদ্দেশ্য ছিল যে লোকে তার শেষ নাম দিয়ে জানতে না পারে। তিনি তার নথিতে আরএন কোবিন্দও(RN Kovind) লিখেছেন যাতে তার বাবার নাম সবার কাছে না জানা যায়। নম্র প্রকৃতির স্বাতী অনেক দিন এই গোপন কথা কাউকে জানতে দেয়নি।
রামনাথ কোবিন্দ ছোটবেলা থেকেই স্বাতীকে স্বাবলম্বী হতে শিখিয়েছিলেন। বাবার দেওয়া মূল্যবোধ নিয়েই জীবন চলছে সে। স্বাতী কখনো তার বাবার নামের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেনি। রাম নাথ কোবিন্দ 25 জুলাই, 2017-এ রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন। তখন স্বাতী ছুটিতে ছিলেন। কিন্তু তিনি দলের কাউকে জানতে দেননি যে তিনি তার বাবার শপথ গ্রহণের জন্য ছুটি নিচ্ছেন।
এয়ার ইন্ডিয়ায় বিষয়টি প্রকাশের পরও স্বাতী তার চাকরি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে চাকরি ছেড়ে দেবেন কি না, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “দেখা যাক এরপর কি হয়।” বিমানে ক্রু মেম্বার হিসেবে কাজ করতেন স্বাতী। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এয়ার ইন্ডিয়া তাকে সদর দফতরে পাঠিয়ে দেয়।
• রামনাথ কোবিন্দ কে?
রামনাথ কোবিন্দ 1945 সালের 1 অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলার দেরাপুর তালুকের একটি ছোট গ্রাম পারনখেতে একটি দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কোবিন্দের প্রাথমিক শিক্ষা হয়েছিল খানপুরে। পরে তিনি কানপুরের DAV Law college থেকে আইন ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন অধ্যয়ন শেষে তিনি দিল্লি হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। 1977 সালে, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। 1991 সালে বিজেপিতে যোগদানকারী কোবিন্দ 1994 থেকে 2006 সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। তিনি 2001 সালে ভোগনিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি মনোনীত হন, কিন্তু হেরে যান। রামনাথ কোবিন্দের মেয়ের চিন্তাভাবনা থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে তিনি কীভাবে তার সন্তানদের তৈরি করেছেন।