যদি মনে বিশ্বাস থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি ঈশ্বর দর্শন করতে পারবেন। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মন্দির আছে যেখানে স্বয়ং ঈশ্বর বসবাস করেন। তেমনি একটি পবিত্র ধাম হলো কেদারনাথ (Kedarnath)। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের চোরাবারি হিমবাহের কাছে, মন্দাকিনী নদীর তীরে অবস্থিত দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির, কেদারনাথ (Kedarnath)। বলা হয়, জীবনে যদি কোন সৌভাগ্য করেন তবেই আপনি কেদারনাথ আসতে পারবেন।
এই কেদারনাথের উল্লেখ মহাভারতে রয়েছে। বলা হয় পঞ্চপান্ডব যখন স্বর্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন তখন ঠিক এই কেদারনাথের কাছে ভগবান শিব একটি ষাঁড়ের রূপ ধারণ করে তাদের পথ আগলে দাঁড়ান। ভীমের সঙ্গে ষাঁড়রূপী শিবের ভয়ংকর লড়াই হয় এবং লড়াইয়ে ভীম জিতে যায় এবং ষাঁড়ের ধর থেকে মাথা আলাদা করে দেন তিনি। গোটা দেহটি যে স্থানে ছিল সেটাই আজ কেদারনাথ মন্দির রূপে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দেহের আরো চারটি টুকরো চারটি জায়গায় ছিটকে পড়েছিল যেখানে কেদারনাথের মন্দিরের মতোই আরো তিনটি মন্দির তৈরি করা হয়।
এই মন্দিরের কোনায় কোনায় লুকিয়ে রয়েছে এমন অনেক রহস্য যা বারবার প্রমাণ করে দেয় ঈশ্বরের অস্তিত্ব। প্রতিবছর এই কেদারনাথের যে লক্ষ লক্ষ ভক্ত দর্শন করতে আসেন বাবা শিবের, তারা প্রত্যেকে বিশ্বাস করেন এই মন্দিরে একবার এলে সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়ে যায়। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু পুরানে কাহিনী এবং অজানা রহস্য যার মধ্যে কিছু কথা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো আমরা।
আমরা সকলেই জানি কেদারনাথ ধামের দরজা ছয় মাসের জন্য বন্ধ থাকে এবং ৬ মাস কেদারনাথ মন্দিরে পুজো হয়। ৬ মাস যখন এই মন্দির বন্ধ থাকে তখন সেখানে এটি অক্ষয় প্রদীপ জ্বালানো হয় যা অক্ষয় তৃতীয়ার দিন আবার এসে নিভিয়ে দেওয়া হয়। ছয় মাস যখন মন্দির বন্ধ থাকে তখন তীব্র ঠান্ডার কারণে সেখানে কোন জন মানবের লেশমাত্র থাকে না কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে টানা ছয় মাস ওই অক্ষয় প্রদীপ ঠিক একই ভাবে জ্বলতে থাকে। মনে করা হয় এই কেদারনাথ মন্দিরের ছয় মাস দেবতারা পুজো করেন এবং ছয় মাস পুজো করেন মানুষ।
এছাড়াও ২০১৩ সালের বিধ্বংসী হড়কা বানে যখন সম্পূর্ণ উত্তরাখন্ড জলের তলায় ডুবে গিয়েছিল ঠিক তখন কোন এক আশ্চর্য দৈ্বিক শক্তির বলে এই কেদারনাথ মন্দির একেবারে অক্ষত ছিল। এক অলৌকিক কারণে পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি বিশাল পাথর এমনভাবে কেদারনাথ মন্দিরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায় যার ফলে সম্পূর্ণ মন্দির রক্ষা পায়।
আরও পড়ুন: চিন্তার দিন শেষ, এবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও GPay, PhonePe থেকে পাঠানো যাবে টাকা
এরকম আরো অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনার কথা আমরা জানতে পেরেছি যার মধ্যে একটি হলো, এক ব্যক্তি কেদারনাথ মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন কিন্তু কেদারনাথ মন্দিরে যখন তিনি পৌঁছন তখন মন্দিরের দরজা বন্ধ করার সময় চলে আসে। মন্দিরের পুরোহিতরা বলেন, আবার ছয় মাস পর আসতে কিন্তু ওই ব্যক্তি বলেন তার পক্ষে আবার ছয় মাস পর আসা সম্ভব নয়। কিন্তু পুরোহিতরা মন্দিরের দরজা খোলা সম্ভব নয় বলে সেই স্থান থেকে প্রস্তান করেন। একরাশ হতাশা নিয়ে ওই ব্যক্তি সেখানেই বসে পড়েন এবং ক্ষুধা তৃষ্ণায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। সেদিন রাতে এক সাধু সেই ব্যক্তির কাছে আসেন এবং তার ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণ করেন এবং জানতে চান ওই ব্যক্তি কেন ওখানে বসে রয়েছেন। ব্যক্তি তার মনের সমস্ত ইচ্ছা ওই সাধুর কাছে বর্ণনা করেন।
আরও পড়ুন: সিনেমা কেউ হার মানাবে এক কাশ্মীরি কন্যা ও ভারতীয় সেনা জওয়ান রঞ্জিত সিং এর এই প্রেমকাহিনী!
রাতে ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণ হলে ওই ব্যক্তি সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন এবং পরের দিন সকালে দেখেন পুরোহিত এবং আরো দুই ব্যক্তি মন্দিরের দরজা খোলার জন্য আসছেন। পথে বসে থাকা ওই ব্যক্তিকে দেখে পুরোহিত ভীষণ অবাক হয়ে যান এবং বলেন কি করে আপনি ছয় মাস এখানে বসে আছেন। কথাটি শুনে ওই ব্যক্তি ভীষণ অবাক হয়ে যান এবং বলেন আমি তো সবেমাত্র কাল রাতেই এসেছি। এই কথা শুনে পুরোহিত এবং তার সঙ্গে থাকা ওই চার ব্যক্তি ভীষণ অবাক হয়ে যান এবং বুঝতে পারেন স্বয়ং ভগবান শিব দৈনিক বলেই ছ মাস এক রাতে শেষ করে দিয়েছেন।