দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেক জিনিস বহনের জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রয়োজনীয়। দৈনন্দিন জীবনে ক্রমশ বেড়েই চলেছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। প্লাস্টিক অপচনশীল তাই কোনভাবেই এডমিনাশ না হওয়ার কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। রাস্তাঘাটে অনেক সময় দেখা যায় প্লাস্টিক ব্যবহার করে মানুষ যেখানে সেখানে তা ফেলে দিচ্ছে। এসব প্লাস্টিকের বোতল (Polyethylene Terephthalate Or PET) প্লাস্টিকের প্যাকেট চারিদিকে পড়ে থাকা হলো পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় ভূমিকা। তবে আপনি কি কোনদিন শুনেছেন প্লাস্টিক থেকে হীরার (Dimond) মতো মূল্যবান রত্ন তৈরি হয়। যদি না জানেন, তবে এই প্রতিবেদনটি আপনাদের জন্য।
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন মহাকাশে অবস্থিত দুটি গ্রহ – নেপচুন (Nepchun) ও ইউরেনাসে (Uranus) হীরার বৃষ্টি হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচন্ড চাপ ও তাপের ফলে হাইড্রোকার্বন হীরায় পরিণত হয়। অনেক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, বরফ গ্রহে (Ice Planet) অবস্থিত উচ্চচাপ ও তাপমাত্রা কার্বন ও হাইড্রোজেনকে কঠিন হীরেতে পরিণত করেন। বিজ্ঞানীরা ঠিক এই পদ্ধতিতেই পৃথিবীতে প্লাস্টিক থেকে হীরা উৎপাদন করা নিয়ে গবেষণা করছেন। চলুন আজকের এই প্রতিবেদনে এই সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
জার্মানি ও আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী একসঙ্গে ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার SLAC ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরিতে(SLAC National Accelerator Laboratory) সৌরজগতে নেপচুন ও ইউরেনাসের মতো কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে যেখান থেকে পলিস্টিরিন (Styrofoam) থেকে ছোট হীরার খণ্ড তৈরি করা শুরু করেছিল। এই হীরাগুলি ন্যানো-ডায়মন্ড (Nano – Diamond) নামে পরিচিত। আবারো ৫ বছর পর এই গবেষণা শুরু হয়েছে। জানেন হীরা তৈরিতে কি ব্যবহার করা হয়?
ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট (PET)। শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালের (Science Advances Journal) গবেষণার ফলাফল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, “মহাকাশের এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি শুধুমাত্র জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে না, তার সঙ্গে আমরা যেখানে সেখানে যেসব প্লাস্টিক ফেলি, সেই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে ন্যানো-ডায়মন্ড তৈরিতেও সহায়ক হবে।” বিজ্ঞানী ডমিনিক ক্রাউস (Scientist Dominique Krause) এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এই বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য হলো – দুটি বড় গ্রহে কিভাবে হীরা বৃষ্টি সৃষ্টি হয় তা দেখা ও সে সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন তাদের দল বিশেষ এক ধরনের পানি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা সুপার-আয়নিক ওয়াটার নামে পরিচিত। এই দলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি তরল ও কঠিন পদার্থের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করে। বিজ্ঞানীদের মতে এই জলই তৈরি করে বরফ গ্রহের ভূত্বকের আবরণ। বিজ্ঞানী ক্রাউসের মতে, “বিশাল আকৃতির এই দুটি বরফময় গ্রহে ন্যানো ডায়মন্ড খুঁজে পাওয়ার প্রকৃত অর্থ হলো – ওই গ্রহের পরিবেশে বৃদ্ধি পেয়েছে সুপার-আয়নিক ওয়াটার।”