প্রেমের সবচেয়ে মধুরতম উদাহরণ হিসেবে আমরা রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা কে বর্ণনা করি। কৃষ্ণ অতি শৈশব বয়সে রাধার প্রেমে পড়ে যান। কৃষ্ণ মন থেকে রাধার প্রেমে আবদ্ধ হন। শ্রীকৃষ্ণের দুটি জিনিস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল একটি হলো বাঁশি ও অন্যটি হলো রাধা। যেন একে অপরের নিরীক্ষণ মেলবন্ধন। শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির আওয়াজ শুনে রাধা ঘরে বসে থাকতে পারতেন না। বাশির সুর রাধার মন কে উৎসাহিত করে তুলত। শ্রীকৃষ্ণের এই বাঁশি টিই কৃষ্ণ ও রাধার মধ্যে প্রেমের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। আমরা দেখি যখন শ্রীকৃষ্ণ রাধার থেকে আলাদা হয়ে যান তখন রাধার বিরহ ব্যথা কিরূপ ছিল।
কারণ শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম কে মামা কংস আমন্ত্রিত করেছিলেন। এটি ছিল ভগবান কৃষ্ণ ও রাধার প্রথম আলাদা হওয়ার কাহিনী। মামা কংসের কাছে যাওয়ার আগে শ্রীকৃষ্ণ রাধার সঙ্গে দেখা করেন এবং ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেননি। এরপর রুকমিনির সাথে শ্রীকৃষ্ণের বিয়ে হয়ে যায় অন্যদিকে তারা অপেক্ষা করতে থাকে। অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণ বিবাহ করার জন্য রুকমিনির তার ভাইয়ের বিপরীতে গিয়েছিলেন। রুকমিনি অবশ্য বহু বছর থেকেই শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবাসতেন।
রুকমিনি শ্রীকৃষ্ণের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যখন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন থেকে বিদায় নেন তারপর থেকে রাধার খুব একটা বর্ণনা পাওয়া যায় না। যদিও শ্রীকৃষ্ণ রাধার কাছ থেকে বহুদূরে চলে যায় তবুও রাধার মনে শ্রীকৃষ্ণ সর্বত্র বিরাজমান ছিলেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে আমরা দেখি শ্রী কৃষ্ণ মথুরা জান মামা কংসের কাছে এবং সেখানে অনেক দানব হত্যা করেন। তারপর শ্রীকৃষ্ণ প্রজাদের রক্ষার্থে দারোকা এ যান এবং এই জন্যই তার নাম হয় দ্বারকাধীশ।অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন ত্যাগ করার ফলে রাধার জীবনে অন্য মোড় আসে। রাধা একজন যাদবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহ হলেও রাধার অন্তরের প্রেম ছিল কৃষ্ণের জন্য।
রাধা কৃষ্ণ
একদিকে যেমন রাধা স্ত্রী হিসেবে তার কর্তব্য পালন করেছিলেন অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণ যে কারণ এর জন্য ধরণীতে দেবতা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই কার্য শ্রীকৃষ্ণ নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। সব দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রাধা শেষবারের মতো শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে দারোকা তে যান। এবং শ্রীকৃষ্ণের সাথে সেখানে দেখা হয়। সাথে দেখা হয় শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিণীর সাথে। অবশ্যই এই খবরে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত ছিলেন না। অবশ্য দ্বারকা তে রাধার বিষয়ে কেউ কিছু জানতেন না। অবশেষে শ্রীকৃষ্ণ রাধার অনুরোধে তাকে প্রসাদে দেবিকা হিসেবে নিযুক্ত করেন।
সেখানের গাধা প্রাসাদের নানা কাজে দেখাশোনা করতেন এবং অবসর সময়ে শ্রীকৃষ্ণকে মন ভরে দেখতেন। পেনিসে কৃষ্ণের সাথে আধ্যাত্বিক মনের মিলন করতেন। অবশেষে তিনি প্রাসাদ থেকে বহুদূরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সাথে মনে মনে রাধা আধ্যাত্বিক ভাবে যুক্ত ছিলেন।বহু বছর কেটে যায়, রাধা একাকী হয়ে পড়ে এবং তার সাথে দুর্বল হয়ে পড়েন। এইসময় রাধার শ্রীকৃষ্ণের প্রয়োজন অনুভব করেন। শ্রীকৃষ্ণ রাধার কাছ থেকে কিছু দাবি করার অনুরোধ করলে রাধা তা অস্বীকার করেন। কিন্তু তাও শ্রীকৃষ্ণ বলেন কিছু দাবি করতে। রাধা শ্রীকৃষ্ণ কে বাঁশি বাজাতে অনুরোধ করেন।
শ্রীকৃষ্ণ ততক্ষণ পর্যন্ত বাঁশি বাজাতে থাকেন যতক্ষণ না পর্যন্ত আধ্যাত্মিক রূপ থেকে কৃষ্ণের সাথে বিলীন না হয়ে যায়। অবশেষে শ্রীকৃষ্ণের মধুর বাঁশির আওয়াজ শুনতে শুনতে রাধা তার দেহত্যাগ করেন। রাধারানী দেহত্যাগ করলেও শ্রীকৃষ্ণ জানতেন তাদের প্রেমলীলা অমর। প্রেমের প্রতীক কে অটুট রাখতে তার বাঁশি টি ভেঙে ফেলেন। এই ঘটনার পর থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর কোন বাদ্যযন্ত্র এমনকি বাঁশি ও বাজান নি। দ্বাপর যুগে ভগবান নারায়ণ শ্রী কৃষ্ণ রূপে এবং সন্তান জন্মগ্রহণ করেন যাতে তাদের প্রেমলীলা যুগ থেকে যুগান্তরে অটুট থেকে যায়।