কথিত আছে, খাদ্যরসিক বাঙালি মাছে-ভাতে স্বস্তি পায়। অর্থ্যাৎ যতই খাবার পাতে বাঙালিদের মন্ডা-মিঠাই দেওয়া হোক না কেন, তবুও সুস্বাদু মাছের কোনো একটা আইটেম খাবারে রাখতেই হয়। ঠিক তেমনই হল আলু (Potato)। বিভিন্ন রকমের তরি-তরকারিতে আলু না দিলে একদম স্বাদই হয় না। আলু এমন একটা সবজি যা সব কিছু রান্নাতেই দেওয়া যায়।
তবে আপনি কি জানেন বর্তমানে কলকাতা সহ বিভিন্ন পার্শ্ববর্তী এলাকায় চন্দ্রমুখী আলুর নাম নিয়ে কিলো কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে নকল আলু (Fake potatoes)। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের লোভে যে নকল আলু বিক্রি করছে তা হল কম দামি হেমাঙ্গিনী আলু। আলুর প্রতি মধ্যবিত্তদের চাহিদার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত অসাধুদের এই নকল ব্যবসা বেড়ে চলেছে। হেমাঙ্গিনী আলু এবং চন্দ্রমুখী আলুর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। অনেকে হয়তো দেখে চিনতে পারেন। তবে আপনি যদি এ বিষয়ে অবগত না হন তাহলে আপনাকে জানিয়ে দিই চন্দ্রমুখী আলু এবং হেমাঙ্গিনী আলুর মধ্যে কি পার্থক্য রয়েছে।
সম্প্রতি হুগলিতে অবস্থিত একটি কৃষি সম্প্রদায়ের তরফ থেকে জানা গেছে, আসলে আলু মিশ্র প্রজাতির হয়। পাঞ্জাব এবং জলন্ধরের বিভিন্ন অংশে হেমাঙ্গিনী আলুর (Hemangini Potato) চাষ হয়। এই আলুর ফলন অনেক বেশি হলেও তৈরি করতে বেশ কম সময় লাগে। এছাড়াও ৬০ বস্তা চন্দ্রমুখী আলু উৎপাদন করতে যে খরচ ও সময় লাগে, সেক্ষেত্রে ৯০ বস্তায় হেমাঙ্গিনী আলু চাষ করতে কম সময় লাগে সাথে খরচও অনেক কম হয়। তাই কৃষি ব্যবসায়ীদের এই আলুর প্রতি আকৃষ্টতা বাড়ছে। সেটাই জনমানুষকে ঠকিয়ে তারা বেশি দামে বিক্রি করে নিজেদের উপার্জন বাড়িয়ে চলেছে।
তাই এই বিষয়ে হুগলী জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী (Monoj Chakraborty) জানিয়েছেন, এভাবে দুটি আলুর পার্থক্য করা কখনোই সহজ কাজ নয়। হেমাঙ্গিনী আলু তৈরি হয় চন্দ্রমুখী আলুর সাথে জ্যোতি আলুর ক্রস ব্রিড করে। এই আলুর প্রচুর চাষ হয় হুগলি জেলার পুরশুরা এবং তারকেশ্বর অঞ্চলে। যখন ৩-৪ মাস সময় লাগে চন্দ্রমুখী আলু তৈরি করতে তখন এই হেমাঙ্গিনি আলু মাত্র ২ মাসের মধ্যেই উৎপাদিত হয়ে যায়।
আসুন জেনে নিন কিভাবে চিনবেন কোনটা আসল আর কোনটা নকল আলু ?
প্রকৃতপক্ষে এই চন্দ্রমুখী আলু এবং হেমাঙ্গিনী আলুর মধ্যে বাইরে থেকে কোনও পার্থক্য নেই।দুটোর খোসাই খুবই পাতলা। চন্দ্রমুখী আলুর ভেতরের অংশটা বাসন্তী রঙের হয়। অপরদিকে হেমাঙ্গিনী আলুর ভেতরে অংশ হয় সাদা রঙের। এই আলু দুটির পার্থক্য সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় যখন সেদ্ধ করা হয়। কারণ চন্দ্রমুখী আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে আঠার মতো লেগে থাকে হাতে আর অন্যদিকে নকল হেমাঙ্গিনী আলু ভালোভাবে সেদ্ধই হয় না।