বদ্রীনাথ (Badrinath) থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং ভারতের একেবারে শেষ গ্রাম মানা (Mana is the last village in India) থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত রয়েছে বসুধারা (Vasudhara) নামে পরিচিত এই বিস্ময়কর জলপ্রপাত।
উত্তরাখণ্ডকে (Uttarakhand) ভগবানের বাসস্থান বলা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই পর্যটন স্থানের প্রতিটি কোণায় ভগবান বাস করেন। নদী ও জলপ্রপাত থেকে শুরু করে এখানকার ধর্মীয় উপাসনালয়গুলিতে রয়েছে আলাদা গুরুত্ব, রহস্য ও ইতিহাস যা তাদের সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তোলে। আজও এই প্রতিবেদনে আপনাদের এমনই একটি জলপ্রপাতের কথা বলল যা চামোলি জেলার (Chamoli District) বদ্রীনাথে (Badrinath) অবস্থিত। এই জলপ্রপাত সম্পর্কে সকলের ধারণা রয়েছে যে এই জলপ্রপাতের জল পাপী মানুষের সংস্পর্শে এলে জল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি।
ধর্মগ্রন্থগুলিতে আরও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই অবাককরা জলপ্রপাতটি বদ্রীনাথ থেকে ৮ কিলোমিটার এবং ভারতের একেবারে শেষ গ্রাম মানা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা বসুধারা নামে পরিচিত। বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী, এই জলপ্রপাতের কথা আমাদের শাস্ত্রেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই বসুধারা জলপ্রপাতটিকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয় যা এর মধ্যে অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। এই জলপ্রপাতটি প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতা থেকে অঝোরে ঝড়ে পড়ে এবং এর সুন্দর মুক্তার মতো জলের স্রোত এখানে আসা পর্যটকদের স্বর্গের মতো অনুভূতি জোগায়।কথিত আছে, এই জলপ্রপাতের এক ফোঁটা জলও পড়ে না পাপীদের গায়ে। প্রবল স্রোতে এই জলপ্রপাতের জল গড়িয়ে নীচে পড়লেও তা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর পড়ে না।
শাস্ত্র অনুযায়ী, পঞ্চ পাণ্ডবের মধ্যে সহদেব এই স্থানে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। সকলে বিশ্বাস করেন যে এই জলপ্রপাত থেকে এক ফোঁটা জল যদি কোনও ব্যক্তির উপর পড়ে তবে বোঝা যায় তিনি একজন গুণী এবং মহৎ ব্যক্তি। এই কারণেই দেশ বিদেশের বহু ভক্তরা এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং এই অপূর্ব ও অলৌকিক জলপ্রপাতের নিচে এসে দাঁড়ান।
জলপ্রপাতের জলে সকলের শরীর সুস্থ হয়ে ওঠে। কারণ অনেক ভেষজ উদ্ভিদের সংস্পর্শে এসে এই ঝর্ণার জল নীচে পড়ে। তাই যার গায়ে এর জল পড়ে, তার শরীর বহুবছর সুস্থ ও সতেজ থাকে এমনটাই বিশ্বাস করা হয়।
মনে করা হয় যে, অষ্ট বসু এখানে কঠোর তপস্যা করেছিলেন বলে এই জলপ্রপাতের নাম হয়েছে বসুধারা (Vasudhara)। এই জলপ্রপাতটি এতটাই উঁচু যে পাহাড়ের গোড়া থেকে চূড়া পর্যন্ত পরিলক্ষিত করা অসম্ভব। ভক্ত ও পর্যটকদের এখানে পৌঁছানোর জন্য মানা গ্রাম (Mana Villege) থেকে ঘোড়া-খচ্চর এবং ডান্ডি-কান্দির সুবিধাও রয়েছে।
মানা গ্রাম (Mana Villege) থেকে বসুধারা জলপ্রপাত (Vasudhara Waterfall) যাওয়া জন্য পায়ে চলা পথ শুরু হয়। সরস্বতী মন্দির (Swaraswati Temple) পেরিয়ে ৫ কিমি দীর্ঘ এই ট্র্যাকটিতে পৌঁছানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ এখানকার মাটি খুব শক্ত এবং পাথর সমৃদ্ধ হয়। তাই মানা থেকে বসুধারা (Vasudhara Waterfall) পর্যন্ত ট্রেকিং করতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হল পথে খাবার কিংবা পানীয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই।