Skip to content

ভারতে এমন ৫ জন বীর সেনা জওয়ান, যাদের মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রী কেও করিয়ে দিয়েছিলেন চুপ

ভারতীয় জওয়ান রা আমাদের দেশের সুরক্ষার মূল স্তম্ভ। তারা সীমান্তে প্রহরীর ন্যায় দাঁড়িয়ে আমাদের তথা দেশবাসী দের বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে চলেছেন। ভূ-স্বর্গে অর্থাৎ কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা হয়, শত্রুরা সব সময় সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে। প্রতিদিন আমাদের দেশের জওয়ানরা শহীদ হয়ে চলেছেন কিন্তু তারা এক ইঞ্চিও তাদের স্থান থেকে পিছপা হননি। ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করে এবং তারপর ভারতের সুরক্ষার দায়িত্ব যখন সেনাবাহিনীর হাতে আসে তখন থেকেই ভারতীয় জওয়ানরা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন ও বর্তমানে দিয়ে চলেছেন। আজ আমরা সেইসব মহান সাহসী জাওয়ানদের মধ্যে 5 জন এর সাহসিকতার গল্প শুনবো।

 

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু কে মুখের উপর জবাব দিয়েছিলেন এই জওয়ান…

ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম যেদিন ব্রিটিশ অফিসারের হাত থেকে ভারতীয় সেনার দায়িত্ব নেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কারিয়াপ্পা সেদিন টিকে Army Day হিসেবে পালন করার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই দায়িত্ব কাকে দেয়া হবে এই নিয়ে জহরলাল নেহেরু বৈঠকে বসেছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ আলোচনার পর জহরলাল নেহেরু বলে উঠেন, ‘একজন ব্রিটিশ অফিসার কে এই দায়িত্বে বসানো উচিত কারণ ব্রিটিশরা আমাদের থেকে এ বিষয়ে বেশি পারদর্শী।’ প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় আলোচনায় উপস্থিত প্রায় সকলেই সহমত হন।

কারিয়াপ্পা

 

সেনা জওয়ান

ঠিক সেই সময় আর্মি দের মধ্যে এক অফিসার গর্জে উঠে বলেন,’আমরা তো দেশ চালাতেও অভ্যস্ত নই, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পদে একজন ব্রিটিশ কেই রাখা উচিত। তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে বলে ওঠেন যে, ‘আপনি কি এই পদে বসার জন্য প্রস্তুত?’ তখন ঐ জওয়ান এই পদের জন্য সুযোগ ফিরিয়ে দেয় এবং এই পদটির জন্য লেফটেনেন্ট জেনারেল কারিয়াপ্পার নাম নেন। আপনাদের মনে প্রশ্ন উঠছে কে এই জাওয়ান। এই জওয়ান আর কেউ নন ইনি হলেন সেনাবাহিনীর প্রথম লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাথু সিং রাঠোর। এই জওয়ান এর সাহসিকতার পরিচয় আশা করি আর বোঝাতে হবে না।

শহীদ হওয়ার পূর্বে এই জওয়ান এর শেষ কথা ‘না ছোড়না…

আমরা প্রায় সকলেই 1999 সালের ‘অপারেশন বিজয়’ এর কাহিনী জানি। এই অপারেশন বিজয় এর সময় প্রাক্তন কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন পান্ডে। ইনি তখন জুবার টপ দখলের জন্য তার সেনাদের নিয়ে এগিয়ে চলছিলেন। অন্যদিকে শত্রুপক্ষ এগিয়ে আসতে থাকে। সামনে আসা সব বাধা অতিক্রম করে শত্রুকে উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন পান্ডে। সামনের দিক থেকে শত্রুদের ঝাকে ঝাকে গুলি আসছিল, ক্যাপ্টেন পান্ডের কাঁধে ও পায়ে গুলি লাগে তবুও তিনি অস্ত্র ছাড়েননি। লড়াই করে গিয়েছিলেন গুলি লাগার পর ও একের পর এক পরীক্ষা পার করার পর তিনি জ্ঞান হারান এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি শত্রুপক্ষের সেনাদের খতম করেন। মৃত্যু হওয়ার আগে তার শেষ কথা ছিল ‘না ছোড়না…..’

ক্যাপ্টেন পান্ডে সেনা জওয়ান

কাশ্মীর উপত্যকা কে পাকিস্তানের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন এই ভারতীয় জওয়ান।

1947 সালের নভেম্বর মাসে কাশ্মীরের এক অপারেশনের বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন মেজর সোমনাথ শর্মা। মেজর সোমনাথ শর্মার হাত তখন প্লাস্টার করা ছিল কারণ তিনি আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই অবস্থাতেই যুদ্ধে নামেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তার কাছে একটি মর্টার শেল ফাটে, এবং তিনি গুরুতর আহত হয়ে পড়েন। এককথায় মৃত্যুর অনেক কাছে চলে যান তবুও যতটুকু সময় তিনি পেয়েছিলেন সেই সময় তিনি হেডকোয়ার্টারে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ পৌঁছে দেন।

তিনি জানান, ‘ শত্রুপক্ষ রা আমাদের থেকে মাত্র 50 মিটার দূরে রয়েছে এবং আমাদের সংখ্যা অনেক কম, ভয়ঙ্কর গুলিগোলা চলছে, কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে এক ইঞ্চিও ছাড়বো না। শেষ জওয়ান পর্যন্ত লড়াই করে যাবে।’ তারপর যুদ্ধক্ষেত্রে মেজর সোমনাথ শর্মা শহীদ হয়ে যান। কিন্তু শ্রীনগর তথা কাশ্মীর উপত্যকা কে পাকিস্তানের হাত থেকে রক্ষা করে গিয়েছিলেন।

জওয়ান

কারগিল যুদ্ধে অপারেশন টাইগার হিলের লড়াই…

গ্রেনেডিয়ার যাদবের হাতে কারগিল যুদ্ধের সময় টাইগার হিল দখলের দায়িত্ব ছিল। শত্রুপক্ষের সেনা কোথায় লুকিয়ে ছিল তা কেউ জানত না। ঠিক তখন গ্রেনেডিয়ার যাদব নিজে দড়ি বেঁধে তার জওয়ানদের উপরে উঠে আসার রাস্তা তৈরি করে দেন। তখন শত্রুপক্ষ তাকে উদ্দেশ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেড , রকেট ও গুলি ছুড়তে থাকে। এর ফলে কমান্ডার ও দুই জওয়ান এর মৃত্যু হয়। এই পরিস্থিতিতে গ্রেনেডিয়ার যাদব শত্রুদের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন। শত্রুরা তাকে গুলি করেন তাও তিনি থামেননি ক্রমশ এগিয়ে চলেন। এমনকি ঐ অবস্থায় তিনি চার জন পাকিস্তানী সেনা কে খতম করেন। এভাবে তিনি ও তার সেনাবাহিনী লড়াই করে অবশেষে টাইগার হিল জয় করেন।

গ্রেনেডিয়ার যাদব

শত্রুপক্ষের সেনাকে এই জওয়ান জবাব দিয়েছিলেন, ‘মাধুরী জী তো বিজি হ্যায়। ম্যা আতা হু….

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘শেরশাহ’ বিক্রম বাত্রা শহীদ হওয়ার আগে বলেছিলেন, “ভারতের জয়ের পতাকা ওড়াতে আমি অবশ্যই ফিরে আসবো। অথবা ফিরে আসবো জাতীয় পতাকায় মুড়ে, যেকোনো উপায়ে আমি ফিরে আসবোই।”
কারগিল যুদ্ধে ভারতের এই পরাক্রম জওয়ান বিক্রম বাত্রা শত্রুদের হাতের কাজ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন Point 5140। সময়টি ছিল 7 জুলাই 1999, লাগাতার 36 ঘন্টা লড়াই করার পর শত্রুপক্ষের হ্যান্ডগ্রেনেড এর দ্বারা জখম হন ক্যাপ্টেন নবীন।

ক্যাপ্টেন নবীনের জায়গায় নিজে দায়িত্ব তুলে নেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা। যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের সেনা তাকে বলে, মাধুরী দীক্ষিতকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দিলে তারা লড়াই ছেড়ে দেবে। ঠিক তখন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা উত্তর দিলেন,’ মাধুরী জী তো বিজি হ্যায়। ম্যা আতা হু….’ তারপর লড়াই শুরু হয়, ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার বুকে এবং পিছন দিকে গুলি লাগে। এই অবস্থাতেও তিনি লড়াই চালিয়ে যান। এবং পাঁচজন পাক সেনাকে সেখানে খতম করে দেন। এবং তারপর এই বীর জওয়ান শহীদ হয়ে যান।

বিক্রম বাত্রা

 

এই Point 5140 কব্জা করার জন্য নিজের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করে দেন বিক্রম বাত্রা। ভারতীয় সেনার তরফ থেকে তাকে সম্মান জানানোর জন্য সেই শৃঙ্গের নাম রাখা হয় বিক্রম বাত্রা টপ। তাই আসুন আমরা সকল ভারতবাসী মিলে আমাদের দেশের বীর শহীদ জওয়ানদের সশ্রদ্ধ প্রণাম করি। ভারত মাতা কি জয়। বন্দেমাতরম।