পৃথিবীর বাইরে কি প্রাণ বর্তমান? এই নিয়ে বহু কাল ধরে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। সুদূর থেকে টেলিস্কোপের কোটরে একটি চোখ রেখে নিরন্তর এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন বিজ্ঞানীরা। এবার হয়তো আশার পথ দেখতে পেয়েছেন তারা। সম্ভবত তাদের দীর্ঘদিনের সন্ধানের পথে মিলেছে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। এবার মহাকাশ বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন অবিকল পৃথিবীর মতো দেখতে অন্য একটি গ্রহ। এই বিশেষ গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন কানাডার মনট্রিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই সন্ধানকারী নতুন গ্রহের নাম দিয়েছেন টিওআই-১৪৫২বি বা ‘সুপার আর্থ’।
একটি বিবৃতিতে নাসার (NASA) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সৌর মন্ডলের বেশ কয়েকটি গ্রহের সঙ্গে এই নতুন সন্ধান প্রাপ্ত গ্রহের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। খবর সূত্রে জানা গেছে, এই সন্ধান করা নতুন গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে আয়তনের দিক থেকে ৭০ শতাংশ আরও বড়। পৃথিবীতে যত গভীর সমুদ্র বর্তমান তার চেয়েও অনেক গভীর সমুদ্র রয়েছে হদিস পাওয়া এই নতুন গ্রহে। তবে সবচেয়ে চমকপ্রতো বিষয় হলো এই গ্রহের বিভিন্ন প্রদক্ষিণ বৈশিষ্ট্যতা। খবর সূত্রে জানা গেছে সন্ধান প্রাপ্তই নতুন গ্রহটি দু-দুটি নক্ষত্রের চারিদিকে ঘোরে।
পৃথিবী থেকে এই গ্রহটি ১০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করে। টিওআই-১৪৫২বি বা ‘সুপার আর্থ’ গ্রহটি পৃথিবীর থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই গ্রহের মধ্যে রয়েছে একটি বিশাল আকৃতির সমুদ্র। এই সমুদ্রের বিস্তৃতি সমগ্র গ্রহের ৩০ শতাংশ জুড়ে। জলে ভরপুর এই নতুন গ্রহ।
মাত্র ১১ দিনে এই গ্রহের এক বছর সম্পূর্ণ হয় অর্থাৎ এই গ্রহ একটি নক্ষত্র কে প্রদক্ষিণ করে মাত্র ১১ দিনে। নক্ষত্রটি বেশ ছোট ও গ্রহটির অনেক কাছে রয়েছে, তাই এই দুইয়ের মধ্যে দূরত্ব সূর্য-শুক্র দূরত্বের সমান। সূর্যের থেকে এই গ্রহের তেজও অনেক কম। তাই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তেজ কম হওয়ার কারণেই সুপার আর্থ’-এ তরল অবস্থায় জল থাকা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য নক্ষত্র গুলির চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ‘সুপার আর্থ’-এর সময় লাগে ১ হাজার ৪০০ বছর।
তবে বিজ্ঞানীরা এখনো অনেক পর্যবেক্ষণ করছেন নতুন নতুন তথ্যগুলির প্রতি নিশ্চিত হওয়ার জন্য। একশো আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহে সত্যিই প্রচুর জলের পরিমাণ রয়েছে কিনা তা নিয়ে এখনো গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন জল থাকলেও এই গ্রহে বসবাস করার জন্য প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। তবে ধারণা করা যায় এই পাথুরেময় গ্রহটিতে সামান্য পরিমাণে হাইড্রোজেন ও লিথিয়ামের পরিমাণ থাকলেও থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই গ্রহকে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে তারা আরও ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। আর সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরই আরো বহু অজানা তথ্যের মুখোমুখি হতে পারবেন তারা।