একসময় সমাজের মতোই বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতেও পুরুষদের দাপট ছিল। তবে ৭০-৮০ দশকে বলিউডে এমন একজন অভিনেত্রীর আবির্ভাব হয় যিনি তার নারীকেন্দ্রিক চরিত্রের মাধ্যমে একজন সফল অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি বাস্তব জীবনেও তিনি ভীষণ শক্তিশালী মহিলার ব্যক্তিত্ব নিয়ে যেভাবে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করেন তা সত্যিই অতুলনীয়। বলিউড অভিনেত্রীদের মধ্যে সবথেকে বিতর্কিত জীবন ছিল রেখার (Rekha had one of the most controversial lives among Bollywood actresses)।
নিজের পিতার বেআইনি সন্তান, ৬ টিরও বেশি প্রেমে ব্যর্থতা এবং ২টি বিয়ে নিয়ে অভিনেত্রীর রেখার (Rekha) ব্যক্তিগত জীবন ছিল খুবই বিতর্কিত। আজও এই অভিনেত্রী আগের মতোই লাইমলাইটে রয়েছেন। দুর্দান্ত অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে রেখা (Bollywood Legend Acctress Rekha’s Film) শুধু তার ক্যারিয়ার জীবনে অসংখ্য সিনেমা দর্শকদের উপহার দিয়েছে এমন নয়, নতুন জেনারেশনের অভিনেত্রীদের কাছে রেখা এখন ইন্সপিরেশন। আসুন আজ এই প্রতিবেদনে আমরা বলিউডের এই সেরা অভিনেত্রীর রহস্যজনক অজানা কাহিনী সম্পর্কে জেনেনি।
অভিনেত্রী রেখা (Rekha) এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি শুধু অভিনয় জগতের নয়, পাশাপাশি রাত সভা পর্যন্ত যাত্রা করেছেন। তবে তার ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল সকলের মুখে মুখে। ছোটবেলায় বাবার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পড়ালেখা করার বয়সই তিনি কাজ করা শুরু করেন। তারপর সারা জীবন তিনি একটি মনের মতন সঙ্গী খুঁজতে থাকেন। তার বাবার নাম জেমিনি গণেশন (Jemini Ganeshan) এবং মা পুষ্পাভ্যালি (Pushpavelly)। রেখা বিতর্কিতভাবে জন্মগ্রহণও করেছিলেন। কারণ তার জন্মের আগে তার বাবা-মা বিয়েও করেননি।
প্রেক্ষাগৃহে রেখার প্রথম ছবি “সাওয়ান ভাদো” (Swan Vado) মুক্তি পায়। এই সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন নবীন নিসচোল (Nabeen Nishchal)। রেখার (Rekha) সাথে অভিনেতার এটা প্রথম ডেবিউ ছিল। এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এমন গল্প সকলের মুখে মুখে শোনা যেত। যদিও কিছু মাসের মধ্যেই নবীন নিসচোল-এর (Nabeen Nishchal) দ্বিতীয় সম্পর্ক শুরু হয় এবং রেখা তার জীবন থেকে সরে যায়।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, অভিনেত্রী রেখার জীবনে নবীন নিসচোল-এর পরে যে অভিনেতার প্রবেশ ঘটেছিল তিনি হলেন সকলের প্রিয় সুপারস্টার জিতেন্দ্র (Jitendra)। যদিও এই অভিনেতার আগে থেকেই একজন প্রিয় বান্ধবী শোভা কাপুরের (Shova Kapoor) সাথে সম্পর্ক ছিল। তবে সে কাজের সূত্রে বেশিরভাগ সময়ই বিদেশে থাকতেন। ওই সময়েই জিতেন্দ্র-এর জীবনে রেখার আবির্ভাব ঘটে। জিতেন্দ্র রেখাকে ডেট করছিলেন।
‘এক বেচারা’ (Ek Bechara) ফিল্মের শুটিং চলাকালীন রেখা ও জিতেন্দ্র আরও ঘনিষ্ঠ হতে থাকে এবং তাদের প্রেম নিয়ে চর্চা শুরু হয়। কিন্তু তবুও তিনি বান্ধবী শোভার প্রতিই সবচেয়ে বেশি সিরিয়াস ছিলেন। তাকে ছাড়তে রাজি হননি জিতেন্দ্র। তাই রেখার সঙ্গে প্রায়ই এই বিষয়ে ঝগড়া হত। রেখা দ্য আনটোল্ড স্টোরি (Rekha The Untold Stroy) অনুসারে একটি ছবির শুটিং চলাকালীন জিতেন্দ্র তার সহকর্মীকে জানিয়েছিলেন, “রেখা হল আমার সেরা টাইমপাস।” রেখা (Rekha) একথা জানলে পারলে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।
এরপর অভিনেতা কিরণ কুমার (Kiran Kumar) জীবনে প্রবেশ করেন। যদিও সেই সম্পর্ক বেশি দিনের জন্য স্থায়ী হয়নি। তবে রেখা এতবার প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার পর তখনও সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধানে ছিলেন। তখনই রেখার (Rekha) জীবনে আসেন তার প্রথম স্বামী বিনোদ মেহেরা (Vinod Mehra)।
এই অভিনেতা তিনবার বিবাহ করেছিলেন। রেখার জীবনকে অভিনেতা বিনোদ মেহেরা আলোকিত করে তুললেও শেষে খুব খারাপভাবে বিচ্ছেদ হয়। বিনোদ মেহেরা কলকাতায় রেখাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে গেলে অভিনেতার মা রেখাকে (Rekha) জুতোপেটা করেছিলেন। যদিও রেখা সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে তার এই বিয়ে সম্বন্ধে অস্বীকার করেন।
এরপর রেখার জীবনে আবির্ভাব ঘটে বলিউডের শাহেনশাহ তথা বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের (Amitabh Bachchan)। এই দুজন ভার্সিটাইল অভিনেতা অভিনেত্রী মোট ১০টি চলচ্চিত্রে একসাথে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন এবং অফস্ক্রিনে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। তবে রেখার সাথে যখন আমিতাভের সম্পর্ক শুরু হয় তার আগেই জয়া ভাদুড়ি’কে অভিনেতা বিয়ে করেছিলেন। এই সম্পর্কের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল যখন রেখা ঋষি কাপুর (Rishi Kapoor) এবং নীতু সিংয়ের (Neetu Shing) বিয়েতে মঙ্গলসূত্র এবং সিঁদুর পরে পৌঁছেছিলেন।
এরপর জনসম্মুখে শোনা যাচ্ছিল যে অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan) রেখা’কে বিয়ে করেছেন। আলোচনা শুরু হওয়ার পর জয়া বচ্চন একদিন রেখাকে বাড়িতে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন যখন অমিতাভ একটি ছবির শুটিংয়ের জন্য বাইরে ছিলেন। জয়া বচ্চন (Jaya Bachchan) রেখাকে খুব ভালোভাবে অতিথি হিসাবে যত্ন করেন। তারপর যখন রেখা বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রেখাকে জয়া বচ্চন বলেছিলেন -“আমি কখনই অমিতকে ছেড়ে যাব না।” এই কথায় রেখা বুঝতে পারিনি অমিতাভ বচ্চন কখনোই তার হবে না।
অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর রেখা বেশ কয়েকবছর সম্পূর্ণ একা জীবন যাপন কাটান। তিনি কেবল মনোযোগ দিয়েছিলেন নিজের কর্ম ক্ষেত্রের দিকে। কর্মজীবনে অজস্র সাফল্যতা অর্জনই তাকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল। বেশ কিছু মিডিয়া রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে স্মিতা পাটিলের (Smita Patel) মৃত্যুর পর রাজ বব্বর যখন দেশে ফিরে আসেন তখন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গিয়েছিল।
তখন তিনি লেখার সঙ্গে দেখা করতেন এবং উভয়ই নিজেদের সমস্যাগুলি ভাগ করে নিতেন। তাদের কেমিস্ট্রিও বেশ ভাল ছিল। রেখার সাথে বেশ অনেকগুলি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে রেখা যখন রাজ বব্বর’কে বিয়ের কথা জানান তখন সে স্পষ্ট বলেন তিনি বিয়ে করতে পারবেন না।
বারবার হৃদয় ভাঙতে ভাঙতে ক্লান্ত হলেও রেখা কর্মজীবনে পুরোপুরি দাপট দেখিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি একমাত্র অভিনেত্রী ছিলেন যিনি পুরুষ শাসিত বলিউডে নারী-প্রধান বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করছিলেন এবং লাইমলাইটে ছিলেন। তারপর ৮০ দশকে শেষের দিকে রেখার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে ফাঁসিয়ে বিবাহ করেন। এই কথা জানার পর নার্গিস রেখাকে ডাইনি বলে সম্বোধন করেছিলেন। এত কাণ্ড হওয়ার পর রেখা তার জীবন থেকে বিদায় নেন।
প্রেমে বহুবার প্রতারণা উপহার পাওয়ার পর ৯০ দশকে থিতু হতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী। এমন সময় তার সাক্ষাৎ হয় দিল্লির ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওলের (Mukesh Agawal) সাথে। তিনি রেখার খুব ভক্ত ছিলেন। তারপর হঠাৎই একদিন খবর পাওয়া যায় এই ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন রেখা। তবে কয়েক মাস পর খুব খারাপ ভাবে দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ১৯৯০ সালের ২ রা অক্টোবর মুকেশ আগরওলের মৃত্যু হলে সকলের রেখাকে দোষারোপ করতে শুরু করে।
বেশ কিছু বছর পর ১৯৯৬ সালে আবার রেখার (Rekha) সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়। বয়সে তুলনায় অধিক ছোট বলিউডের খিলাড়ি অক্ষয় (Akshay Kumar) কুমারকে ডেট করছিলেন রেখা। তবে সময়ের সাথে সাথে অক্ষয় কুমার কোনদিন এর সম্পর্ক মেনে নেননি এবং অভিনেত্রী চুপচাপ তার জীবন থেকে সরে যান।
তবে এবার আমরা এই কিংবদন্তী অভিনেত্রীর প্রেমের সম্পর্কের এমন একটি অজানা খবর জানবো যা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারবেন না। বেশ কিছু বছর পূর্বে একটি খবর এসেছিল যে, বলিউডের এই অভিনেত্রীর নিজস্ব একটি মেয়ে বন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে শারিরীক সম্পর্ক রয়েছে।
বিখ্যাত সাংবাদিক মোহন দীপ তাঁর ‘ইউরেকা’-তে এমনটাই দাবি করে লিখেছিলেন, রেখা পশ্চিম মুম্বাইয়ের বান্দ্রার দুই নম্বর বাংলোতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। তার ব্যক্তিগত সেক্রেটারি ফারজানা (Farzana) ছাড়া সেখানে কারোর প্রবেশ করার অনুমতি ছিল না। আসলে এই সময় অভিনেত্রী সব দিক থেকে খুব ভেঙে পড়েছিলেন এবং তিনি তার এই ঘনিষ্ঠ মেয়ে বান্ধবীর সাথে দীর্ঘদিন শারীরিক এবং মানসিক সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন।