ভারত একটি জনসংখ্যাপূর্ণ বিশাল ব্যস্তময় দেশ আর এই দেশের জনসংখ্যা অত্যাধিক হওয়ায় দেশে জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর বাড়ছে জ্যামের সমস্যা। তাই রাস্তায় জ্যাম কমানোর জন্য বছর বছর প্রচুর ব্রিজ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি আবারও একটি ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে গুজরাট রাজ্যের আমেদাবাদ শহরে।
তবে এই ব্রিজটি শুধুমাত্র জ্যামের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে তৈরি করা হয়নি। নদীর উপর একটি বিশেষ কারণে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। কারণটি হল তাতে সাধারণ মানুষকে ওই বিশাল আকৃতির নদীটির জন্য ঘুরে ঘুরে গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে না হয়। যাতে তাড়াতাড়ি সময়ের সাথে সঠিক জায়গায় পৌঁছানো যায়। আসুন আমরা এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত সমস্ত তথ্য জেনে নি।
গত শনিবার, গুজরাটের আমেদাবাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবরমতী (Sabarmati River) নামক নদীর উপর তৈরী অটল সেতু নামক ব্রিজটির উদ্বোধন করেন। শুধু তাই নয় সেতুটি উদ্বোধন করার পর তিনি তার প্রত্যেক সদস্যদের নিয়ে গোটা সেতুটি পরিদর্শন করেছিলেন। কোন গাড়ি চলাচল করবে না শুধুমাত্র পথচারীদের জন্যই বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছে এই সেতুটি। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) মাত্র দুদিনের কর্মসূচিতেই গুজরাটে গেছিলেন। কারণ এই রাজ্যে তার বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন।
এই সেতুর মাধ্যমে নদী পারাপারের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে। উদ্বোধনের দিনও নরেন্দ্র মোদী এই স্থানে ভাষণ দিয়েছেন এবং সকলকে খাদির কাপড় উপহার দেওয়ার জন্য ও পরিধান করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আমি জানিয়েছেন এর ফলে গতি পাবে ভোকাল ফর লোকাল ক্যাম্পেইন (Vocal For Local Camping)।
এই সেতুর বিষয়ে আরো কিছু বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক …..
১) এই সেতু (Atal Bridge) নির্মাণের প্রকল্পটি ২০১৮ সালে ২১শে মার্চ রিভারফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। এই প্রকল্পটি তৈরীর জন্য আনুমানিক বাজেট ছিল ৭৪ কোটি টাকা। এই সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বাজপেয়ীর নামানুসারে। এই সেতুটির ছাদ জুড়ে দেখা যায় এলিডি আলোর মেলা।
২) প্রত্যেক বছর আমেদাবাদে টানা সাত দিন ধরে চলে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব যার নাম ‘উত্তরণ’। বিভিন্ন দেশের মানুষ একসাথে এই দেশে রংবেরঙের ঘুড়ি নিয়ে হাজির হয়। এই অটল ব্রিজের নকশা করা হয়েছে ঘুড়ি উৎসব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যেখানে এই সেতুর ছাদের রং ইঙ্গিত করবে উৎসবের। ব্রিজের রেলিংগুলি তৈরি হবে কাঁচ এবং স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে।
৩) এমন ভাবে সেতুটি ডিজাইন করা হয়েছে যাতে উপর দিক দিয়ে কিংবা নীচে দিয়ে অর্থাৎ উভয় ওয়াকওয়েই ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রিজের একেবারে শেষে পূর্বপ্রান্তে অবস্থান করছে শিল্প ও সংস্কৃতির কেন্দ্র এবং পশ্চিমদিকে ফুলের বাগান আছে।
৪) এক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে এই সেতুর নকশা। খবর করতে জানা গেছে এই প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েছে মুম্বইয়ের STUP কনসালট্যান্ট।
৫) যানবাহনকারীরা যদি ব্যবহার করতে চান তবে শুধুমাত্র সাইকেল চালকরা যানজট এড়িয়ে নদী পারাপার করতে এই সেতু ব্যবহার করতে পারবেন।
৬) এই সেতুতে কোন প্রকার ভারী যানবাহন তলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র পথচারীরা এই সেতু ব্যবহার করতে পারেন।
৭) ৩০০ মিটার সম্পূর্ণ দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে ২,৬০০ মেট্রিক টন স্টিলের পাইপ ব্যবহার করে। সেতুর ছাদে বসানো হয়েছে রঙিন ফেব্রিকের টাইলস। .
৮) দূর থেকে দেখলে এই বিশাল আকৃতির মাছের মতো দেখতে লাগে।