গত 4 এপ্রিল অটিজম রোগে আক্রান্ত এক শিশুর মা নেহা কুমারি সোশ্যাল মিডিয়ায় টুইট করে বলেন, ‘ আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে অটিজমে আক্রান্ত। বেশিরভাগ খাবারই তার এলার্জি। উটের দুধ ছাড়া তার কিছুতেই চলে না। লকডাউনে আমি যথেষ্ট দুধ কিনতে পারিনি। উটের দুধ এবং সেটির পাউডার রাজস্থানের সাদরিতে পাওয়া যায়। দয়া করে আমার কেউ পাশে দাড়িয়ে এটি এনে দেবার ব্যবস্থা করলে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব। ওই মহিলার সন্তান শুধুমাত্র উটের দুধ খেতে পারে।
গরু ছাগল অথবা মহিষ কোন দুধ সে খেতে পারে না। কিন্তু এই উটের দুধ সুদূর রাজস্থান থেকে আনতে হয়। এবং এটি সুলভ নয়। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। সেই জন্য বর্তমান সভ্যতার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার সোশ্যাল মিডিয়াকে তিনি ব্যবহার করেছেন। এবং সাহায্যের আরজি করে টুইট করেছেন। টুইটে অনেকে সমবেদনা জানালেও তিনি তার মূল সমস্যার সমাধান পাননি। কিন্তু তারপর এক আইপিএস আধিকারিক তার এই টুইট টি পড়েন। এবং সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন।
আইপিএস অফিসার টি হলেন অরুণ বোথরা। ইনি হলেন উড়িষ্যার সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই ইউনিট এর অধিকর্তা। মুম্বাইয়ের নেহা কুমারি এর সাহায্যের আরজি পেয়ে তৎক্ষণাৎ তিনি সাহায্য করেছেন। ছয়দিনের মধ্যে নেহার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন কুড়ি লিটার উটের দুধ এবং কুড়ি কেজি পাউডার দুধ। এরকম এত বড় একটা সাহায্যের জন্য নেহা কুমারি সম্পূর্ণ চিন্তা মুক্ত হয়েছেন। এবং রি-টুইট করে বলেছেন ‘এভাবে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।’
আইপিএস অফিসার কে জিজ্ঞেস করা হয় কিভাবে আপনি এই অসাধ্য সাধন করলেন?
তখন তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন নেহা জির টুইট প্রথমে চোখে পড়ে তারপর আমি তার মোবাইল নম্বর জোগাড় করি এবং জানতে পারি তার ছেলের জন্য উটের দুধ কতটা জরুরি। তাই আমি তাকে সাহায্য করলাম। আইপিএস অফিসারের সাথে সাথে আরও অনেকে এগিয়ে আছেন। তাদের মধ্যে একজন হল তরুণ জৈন। ইনি হলেন north-west রেলওয়েল একজন কর্মকর্তা যিনি উটের দুধ সরবরাহ করে থাকেন।
এমার্জেন্সি ক্ষেত্রে প্রথমে তিনি সেই মহিলাকে 400 গ্রাম দুধ পাঠান যাতে সাময়িকভাবে তার সন্তান সেটি খেতে পারে। তিনি এখানেই থেমে যাননি। তিনি ব্যাপারটি ভালো করে বোঝান। দুধ সংগ্রহটা তার পক্ষে বড় ব্যাপার হয়নি মুল ব্যাপার হলো রাজস্থান থেকে মুম্বাইয়ের সেটিকে পাঠানো। তাই তিনি উচ্চ আধিকারিকদের সাথে কথা বলেন এবং 9 এপ্রিল একটি মালগাড়ি লুদিয়ানা থেকে মুম্বাই রওনা দেওয়ার কথা ছিল সেটিতেই উটের দুধ পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলে ঠিক করেন।
তরুণ জৈন রাজস্থানের হনুমন্ত সিং এক সাপ্লাইয়ারের কথা জানতে পেরে তার সাথে যোগাযোগ করে কুড়ি লিটার দুধ বান্দ্রা পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। গোটা খবরটি কর্ণগোচর হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো এই নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে। আইপিএস আধিকারিক জানান যে সোশ্যাল মিডিয়া কতটা শক্তিশালী মাধ্যম এর থেকে বোঝা যায়।আমরা অনেক সময় নানা সমস্যার মধ্যে পড়ে থাকি। অনেক সময় নিজের আপন জন দেরও পাশে পাই না।
ঠিক এই অবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়া কিভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তা এই নিদর্শন দেখেই আমরা বুঝতে পারলাম। ভালো কাজে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করলে অনেক মানুষ সঠিক ভাবে উপকৃত হতে পারেন। সকলের কাছে আর্জি আপনারাও সোশ্যাল মিডিয়াকে সৎ ব্যবহার করুন।