নাগরিক সংশোধনী বিল যাকে আমরা citizen Amendment Bill বা CAB নামে জানি তা লোকসভায় পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর এ CAA অর্থাৎ Citizenship Amendment Act এ পরিণত হয়েছে। তারপর থেকেই কিন্তু সরকারের এই CAA এবং NRC নিয়ে গোটা দেশে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখা গেছে। এমনকি এই বিষয়টি আন্দোলনের পর্যায়ে চলে গেছিল। এনআরসি হওয়ার ফলে অসমে প্রায় 19 লক্ষ মানুষ নাগরিকতা থেকে বাদ পড়েছেন। সাধারণ মানুষ মনে করে এই বিল টি পাশ করার অর্থ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া। তাহলে আসুন আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি ভারতের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। নিম্নে বিস্তারিত জানানো হলো।
প্রথমত: কোন ব্যক্তি যদি 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি থেকে 1987 সালের 1 জানুয়ারি এর মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহণ করে তাহলে তিনি নিঃসন্দেহে ভারতের নাগরিক।
দ্বিতীয়ত: কোন ব্যক্তি যদি 1987 সালের 1 জানুয়ারি থেকে 2004 সালের 3 ডিসেম্বরএর সময়সীমার মধ্যে জন্ম গ্রহণ করে থাকে এবং তার পিতা বা মাতা কেউ একজন যদি ভারতীয় নাগরিক হয় তাহলে সে ভারতের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে।
তৃতীয়ত: কোন ব্যক্তি যদি 2004 সালের 3 ই ডিসেম্বর অথবা তারপর জন্মগ্রহণ করে থাকেন এবং সেই ব্যক্তির পিতা-মাতার কোন একজন যদি ভারতীয় নাগরিক হোন এবং অন্যজন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী না হলে ওই ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।
চতুর্থত: কোন ব্যক্তির বিদেশে জন্ম হয়ে থাকলেও তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন যদি তার বাবার জন্মসূত্রে ভারতীয় হন। এক্ষেত্রে একটি নিয়ম আছে সেটি হল 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি বা তারপর ও হাজার 1992 সালে বা তার আগে বিদেশে জন্মগ্রহণ করলে সেই ব্যক্তিকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য তার পিতাকে জন্মসূত্রে অবশ্যই ভারতীয় হতে হবে।
পঞ্চমত:
কোন ব্যক্তি যদি 2004 সালে 3 ই ডিসেম্বর অথবা তার পরে দেশে জন্মগ্রহণ করেন সে ক্ষেত্রে তিনি ভারতীয় বলে বিবেচনা হবে না যদি না ওই ব্যক্তির বাবা-মা হলফনামা দিয়ে জানায় যে তাদের সন্তানের বিদেশি পাসপোর্ট নেই।তাছাড়াও সেই শিশুটি বিদেশে জন্ম নেওয়ার এক বছরের মধ্যে স্থানীয় ভারতীয় কনস্যুলেটে তার নাম নথিভুক্ত অবশ্যই করতে হবে।
•• দেশের 2019 সালে 12 ডিসেম্বর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) পাশ হয়। ভারতের তিনটি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ,আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে অর্থাৎ যে দেশগুলোতে প্রধানত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের বাস সেই দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়া বাকি যে সংখ্যালঘিষ্ঠ ধর্ম অর্থাৎ হিন্দু ,বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পারসি ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত সরকার। তবে এই কথাটির মানে এই নয় যে অন্য দেশের মানুষরা ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে না।
সে ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে এবং ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। ভারতের নতুন আইন অনুসারে বিগত আট বছরের মধ্যে 6 বছর ভারতীয় ভূখণ্ডে যারা আছেন শুধুমাত্র তারাই ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখন আমার আপনার মত সাধারন মানুষের অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য অথবা প্রমাণ করার জন্য কি কি নথি পত্র প্রয়োজন। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
যিনি আবেদন করবেন তার বৈধ বিদেশি পাসপোর্ট, মা বাবার জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র, বৈধ আবাসিক অনুমতি এইগুলি থাকা আবশ্যিক।এছাড়াও একটি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট আছে সেখানে গিয়ে আপনি আরও বিস্তারিত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
ওয়েবসাইটটি হল:-
https://indiancitizenshiponline.nic.in/
আপনি যদি অনলাইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটটি হল :- https://indiancitizenshiponline.nic.in তারপর আপনাকে সেই অপশন ক্লিক করতে হবে যেটি জন্য আপনি রেজিস্ট্রেশন করতে চান।তার পরের ধাপে আপনি এপ্লাই অনলাইন (apply online) অপশন ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে একটি পেজ ওপেন হবে, সেখানে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য ইনপুট করুন।
যেমন নিজের নাম, মা বাবার নাম, বৈবাহিক তথ্য, পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি। তারপর Save and Next অপশনে ক্লিক করুন।এর পরবর্তী ক্ষেত্রে আপনার স্ক্রিনে যে পেজ খুলবে সেখানে ঠিকানা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য , পরিবার সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ইনপুট করতে হবে। এবং সবচেয়ে শেষ পেজ এ উল্লেখ করতে হবে যিনি আবেদন করছেন তার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারী মামলা আছে কিনা। এই সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার পর আপনার একটি ছবি আপলোড করে পেমেন্ট করতে হবে। এভাবেই উপরোক্ত ধাপগুলি অনুসরণ করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।