আজ আমরা আপনাদের মেজর রঞ্জিত সিং (Ranjeet Singh) এর আশ্চর্য প্রেম কাহিনীর কাহিনী শোনাবো। যিনি নিজের প্রেমের জন্য প্রাণের আহুতি দিয়েছিলেন। আপনারা হয়তো শুনেছেন আতঙ্কবাদি বুরহান বাণীর মৃত্যুর পর কাশ্মীরের প্রায় চার মাস প্রতিবাদ বিদ্রোহ চলেছিল। কিন্তু কিছু বছর আগে কাশ্মীর এ আর একটা বড় প্রতিবাদ বিদ্রোহ হয়েছিল এক ভারতীয় সেনার ওপর ধর্ষণ ও নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ কে কেন্দ্র করে। সেই সেনা হলেন মেজর রঞ্জিত সিং।
আসুন সম্পূর্ণ কাহিনীটি বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মেজর রঞ্জিত সিং (Mejor Ranjeet Singh) মাত্র 17 বছর বয়সে 2000 সালে ভারতীয় সেনা তে যোগদান করেছিলেন। তিনি নানা সময় নানা ভাবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি অনেক ছোট বড় মিশনে গিয়ে আতঙ্কবাদি দের হত্যা করেন। তার সাহসিকতা কোন জবাব নেই। মূল কাহিনী এইযে মেজর রঞ্জিত সিং কাশ্মীরে পোস্টিং থাকাকালীন এক কাশ্মীরি কন্যার সাথে প্রথম দেখাতেই প্রেম হয়ে যায়। উভয়ই একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে।
কিন্তু তাদের প্রেমের বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুটি কারণ একটি হলো ধার্মিক বন্ধন ও অন্যটি হল সেনাবাহিনীর নিয়ম শৃঙ্খলা। এর ফলে তাদের দেখা খুবই কম সময় হত। প্রেমালাপ বেশিরভাগ সময়ই মোবাইলের মাধ্যমে হত। মেজর রঞ্জিত সিং তার প্রেমিকা কে একটি আংটি উপহার দেয়। একদিন মেজর রঞ্জিত সিং এর অন্য জায়গায় পোস্টিং এর খবর আসে। এখানেই গল্পের মোড় ঘুরে যায়। পোস্টিং চেঞ্জ এর খবর শুনে তারা একে অপরের সাথে চুপিসারে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুন: চিন্তার দিন শেষ, এবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও GPay, PhonePe থেকে পাঠানো যাবে টাকা
দেখা করার জন্য তারা একটি নিরিবিলি স্থানে ভাঙ্গা বাড়ি নির্বাচন করে। রঞ্জিত সিং তার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাওয়ার বিষয়টি কোনো বন্ধু বা আধিকারিক কে জানান নি। মেজর রঞ্জিত সিং তার প্রেমিকার সাথে দেখা করার পর সেই বাড়ি থেকে উভয়ই বেরিয়ে আসে। যখনই তারা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে তখন তাদের কে কিছু কাশ্মীরি কট্টরপন্থী মানুষেরা তাদের কে দেখে ফেলে। এবং তারা মেজর রণজিৎ সিংহের উপর ধর্ষণের অভিযোগ তোলে।
(Ranjeet Singh love story)
মেজর রঞ্জিত সিং ও তার প্রেমিকা দুজনেই সেই কট্টরপন্থীদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা কথা বোঝে নি। সেখানকার পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ে এবং উত্তেজনা ও তার সাথে সাথে বেড়ে ওঠে। মেজর রঞ্জিত সিং চাইলে সেই পরিস্থিতিকে খুব সহজেই অস্ত্র ব্যবহার করে বেরিয়ে আসতে পারতেন কিন্তু তিনি সেই পথ অবলম্বন করেন নি। তিনি নানাভাবে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু তারা কোনমতেই মানতে রাজি ছিল না।
হঠাৎ সেই কট্টরপন্থীদের মধ্যে একজন একটি কুড়ুল নিয়ে মেজর রণজিৎ সিং এর উপর আঘাত করতে আসে। তখন মেজর নিজের আত্মরক্ষার জন্য সেই কট্টরপন্থী মাথায় গুলি করেন। এবং সেখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি তখন জটিল হয়ে পড়ে। আসে পাশে আরো অনেকগুলি ছোটখাটো জটলা ও ভিড় মেজর এর দিকে ছুটে আসে। মেজর চাইলে তার কাছে থাকা গ্রেনেড দিয়ে কট্টরপন্থী দের ভিড় কে উদ্দেশ্য করে ছুড়ে নিজের আত্মরক্ষা করতে পারতেন কিন্তু তিনি সেই পথ অবলম্বন করেন নি।
তাহলে প্রশ্ন সেই পরিস্থিতিতে রঞ্জিত সিং (Ranjeet Singh) কি করলেন?
উত্তরটি খুবই দুঃখজনক। মেজর তার নিজের বন্দুক বের করেন এবং কানের গোড়ায় রেখে সুট করে দেন। এভাবে তিনি নিজের প্রাণ বলিদান দেন। এবার আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেনো নিজে আত্মহত্যা করলেন? কারণ তিনি নিজের প্রাণ রক্ষা করার জন্য এক কট্টরপন্থী কে হত্যা করেছিলেন। তাই মেজর চিন্তা করেন ভারতীয় সেনা কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এই খবর দেশে ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয় সেনার উপর এটির খুবই খারাপ প্রভাব পড়বে, যা মেজর রঞ্জিত সিং কোনদিনই করতে চাননি।
আরও পড়ুন: ভারতের মধ্যেই রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম স্কুল, যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ৬০ হাজার
মেজর রঞ্জিত সিং (Ranjeet Singh) শুধুমাত্র নিজের আত্মরক্ষার জন্যই সেই কট্টরপন্থী কে গুলি করেন। এটিতে কোন দোষ ছিলনা। কিন্তু ভারতীয় সেনার সম্মানের ওপর যাতে এর কোনো প্রভাব না পড়ে সেজন্য তিনি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। এই ঘটনাটি হওয়ার পরেও কাশ্মীরি কট্টরপন্থী ধার্মিক উন্মাদিরা প্রতিবাদ মিছিল চালাতে থাকে। অবশেষে কিছুদিন পর ঘটনার তদন্ত শুরু হয় এবং মেজর রঞ্জিত সিং নির্দোষ সাব্যস্ত হন। রঞ্জিত সিং এর সাথে তার প্রেমিকার সমস্ত কল রেকর্ড যাচাই করা হয় এবং তার প্রেমিকা ও স্বয়ং সকল ঘটনা সকলকে জানান।
Ranjeet Singh
এই সমস্ত কিছু জানার পর কাশ্মীরিরা সেই প্রতিবাদ অবশেষে বন্ধ করে। তদন্তে আরো জানা যায় কাশ্মীরের এই প্রতিবাদের পিছনে মূল ষড়যন্ত্র ছিল বামপন্থী, কট্টরপন্থী মিডিয়া ও পাকিস্তানিদের। এই বিষয়টিকে তারাই উস্কানি দেয় এবং কাশ্মীরি মানুষদের মধ্যে ভুল ভ্রান্তি ও ভুল চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়। কিভাবে একটি সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহৎ প্রতিবাদ গড়ে ওঠে তার সাথে সাথে এক নির্দোষ সোনাকে নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হয় যে সে নির্দোষ ছিল।
ভারত সরকারের তরফ থেকে সেই কট্টরপন্থী কে অর্থাৎ যাকে মেজর রঞ্জি’ত সিং গুলি করেছিলেন তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এবং ভারতের সেনা ওই কাশ্মীরি কন্যার পড়াশোনা ও সুরক্ষা সমস্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করে। মেজর রঞ্জিত সিং চাইলে সেদিন নিজের জীবন বাঁচাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তার জীবন বলিদান দিয়েছিলেন শুধুমাত্র দেশ ও সেনার সম্মান রক্ষা করার জন্য। যাতে তার কারণে দেশের সোনার উপর কোন দাগ না লাগে।
ভারতীয় সেনার তরফ থেকে মেজর রঞ্জি’ত সিং (Ranjeet Singh) কে তার আত্মত্যাগের জন্য ‘Killed In Action’ উপাধি দিয়ে সম্মান জানায়। দেশের জন্য মেজর রঞ্জিত সিং যা করে গেছেন তার জন্য আমরা অর্থাৎ দেশবাসী মেজর রণজিৎ সিং এর কাছে চির ঋণী হয়ে থাকবো।